শীতের মৌসুমে এমনিতেই ভ্রমণকারির সংখ্যা বাড়ে প্রচুর। দেশেতো বটে, বিদেশেও প্রতিবছর বেড়াতে যাওয়ার মতো বাংলাদেশিদের আর্থিক সংগতি হয়েছে বহু আগে।
বাংলাদেশের উওর-পূর্বে অবস্থিত প্রাচীন জনপদ সিলেট। এখানে ভ্রমণকারিদের মূল টার্গেট থাকে হযরত শাহজালাল (র.) ও শাহপরান (র.) এর মাজার জিয়ারত। সেই সাথে সুনীল আকাশ আর গাঢ় সবুজ পাহাড়ের অপরূপ সৌন্দর্য, শিল্পীর তুলিতে আঁকা মখমলের মত চা বাগানের মনোরম দৃশ্য, পাহাড়ি নদির স্বচ্ছ পানিতে পাথরের স্তূপ এবং অতিথি পাখি আর জলপ্রপাতের মনোমুগ্ধকর দৃশ্য পর্যটকদের টেনে আনে বার বার।
সিলেটে এসে যেখানে থাকবেন সেটাও যদি হয় দেখার মতো, সময় কাটানোর মতো কিছু! তাহলে ভ্রমনটা নিশ্চই চমৎকার হবে। তেমনই চমৎকার প্রকৃতির কাছাকাছি থাকার সুযোগ করে দিয়েছে এক্সেলসিয়র সিলেট হোটেল এন্ড রিসোর্ট।
অপরূপ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ঘেরা এক্সেলসিওর সিলেট যেন প্রকৃতির মাঝে আধুনিকতার এক অসাধারন সমন্বয়। সিলেট শহর থেকে মাত্র নয় কিলুমিটার দূরে খাদিমপাড়ায় তিনটি টিলার সমন্বয়ে গড়ে উঠেছে এটি। প্রায় ষাট কেদার তথা সতের একর জায়গা জুড়ে বিস্তৃত পঞ্চাশ হাজার বৃক্ষরাজি শোভিত এই প্রতিষ্ঠানে রয়েছে দুটি হোটেল ভবন। একটির নাম ক্যামেলিয়া ও অপরটি মধুমালতি। নিজস্ব সাতটি হরিণসহ বহু জাতের পাখির কলকাকলিতে মুখরিত ছায়াঘেরা এই হোটেলের বিজনেস ও ফ্যামিলি স্যুটগুলো সত্যিই চিত্তাকর্ষক। বিয়ে, জন্মদিনসহ বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠান, প্রদর্শনী, সম্মেলন ইত্যাদি ইভেন্ট আয়োজনের প্রধান আকর্ষণ এখন এক্সেলসিয়র কনফারেন্স ও ব্যাঙ্কুইটিং হল।
এক্সেলসিয়রের দুটি ফ্লোর জুড়ে রয়েছে কন্টিনেন্টাল ক্যুজিন। উচু টিলায় সুরম্য ডাইনিং মনোমুগ্ধকর। অবলোকন করা যায় শত প্রকারের হাজার হাজার বৃক্ষের নয়নাভিরাম দৃশ্য, নান্দনিক স্থাপনা সমূহ, মনোহরা চায়ের উদ্যান, অসংখ্য বৃক্ষরাজিতে ছেয়ে থাকা জনপদ ও লোকালয়।
উপমহাদেশীয় মেন্যু বৈচিত্রে ভরপুর আভিজাত রেস্টুরেন্টে রয়েছে ফিউশন খাবার, বাংলাদেশী, চায়নিজ, থাই সহ এশিয়ার বিভিন্ন অঞ্চলের মজাদার খাবার। থাকছে প্রাইভেট বুকিং সুবিধা এবং পরিবার-পরিজন, আত্মীয়-বন্ধু কিংবা প্রাতিষ্ঠানিক ভোজ সভায় মিলিত হবার অনন্য সুযোগ।
এক্সেলসিয়রের অতিথিবৃন্দ কেবল স্বাচ্ছন্দময় রাত্রি যাপন কিংবা স্বাস্থ্যপ্রদ রকমারি খাদ্য উপভোগের মধ্যেই সীমিত থাকবেন না। খেলাধুলা, শরীর চর্চা এবং বিনোদনের ক্ষেত্রেও চমৎকার পরিবেশ উপভোগ করবেন।
এই হলিডে রিসোর্টে রয়েছে শিশু পার্ক, অডিটোরিয়াম, মিনি চিড়িয়াখানা ইত্যাদি। রুম ভাড়া পাচ থেকে পনের হাজার টাকা। স্পেশাল অফারে আরো ছাড় দেয়া হয়। এছাড়া মাত্র পঞ্চাশ টাকা জনপ্রতি টিকেট কেটে আপনি পুরো এলাকা ঘুরে দেখতে পারেন। আর শিশুরা সাথে থাকলে তাদের আনন্দটা হবে সীমাহীন। রাইড চড়ে কিংবা পেডেল বুটে আনন্দে মেতে উঠে তারা। প্যাকেজ ট্যুরে জাফলং, মাধবকুন্ড, শ্রীমঙ্গল, ছাতক সহ বিভিন্ন হাওর ও মাজার ভ্রমণের ব্যবস্থাও আছে।
পর্যটকদের কাছে আকর্ষণীয় সিলেট :
প্রতি সপ্তাহে শত শত মানুষের পদচারণায় মুখরিত হয়ে উঠে সিলেট। ঐতিহ্য ও প্রাকৃতিক নিদর্শনাবলীর কারণে সিলেট প্রাচীনকাল থেকেই পর্যটকদের কাছে আকর্ষণীয় স্থান হিসেবে বিবেচিত। হযরত শাহজালাল (রহ) ও শাহপরান (রহ.) সহ ৩৬০ আউলিয়ার স্মৃতি বিজড়িত অগণিত সুফি সাধক ও কৃতি পুরুষের জন্মভূমি, জাতীয় অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালনকারী রত্মগর্ভা এই সিলেট। রূপসী বাংলার অপরূপ অলংকার সিলেটের নাম উচ্চারণ করার সাথে সাথে চা বাগান, মনোরম টিলা, হাওর, নদী, প্রভৃতির কথা মনে পড়ে। সুরমা-কুশিয়ারা-মনু-খোয়াই বিধৌত দুটি পাতা একটি কুড়িঁর সিলেট ঘন সবুজ সমারোহের বনরাজি ঘেরা মনোরম নিসর্গের লীলাক্ষেত্র।
বিশাল বিশাল পাহাড় জুড়ে বিস্তৃত বৃহত্তর সিলেটের বড়লেখায় রয়েছে বিখ্যাত জলপ্রপাত মাধবকুন্ড। ঘন সবুজ পত্র-পল্লবে ঢাকা পাহাড়ের দু’শ ফুট উচুঁ থেকে অবিরাম ধারায় প্রবল বেগে ঝরণার পানি নামার শব্দ ও দৃশ্য অপূর্ব। প্রাকৃতিক সম্পদ সমৃদ্ধ সুনামগঞ্জের টাঙ্গুয়ার হাওর এক স্বপ্নের জগত বলেই মনে হয়। শীত মৌসুমে সুদূর সাইবেরিয়া ও হিমালয় থেকে ঝাঁকে ঝাঁকে ছুটে আসা অতিথি পাখিদের মিলন ক্ষেত্র হাকালুকি হাওর পর্যটকদের জন্য অনন্য স্থান। পাহাড় ও সবুজ অরণ্যের মাঝে শ্রীমঙ্গলের চা বাগানগুলো ক্ষণিকের জন্য হলেও ভুলিয়ে দেয় সব কিছু। ভ্রমণ প্রিয়দের আরেকটি প্রধান আকর্ষণ হচ্ছে জাফলং। খাসিয়া পাহাড় ও সারি নদীর পাশ জুড়ে বিস্তৃত হিমালয় থেকে নদীর ঢেউয়ে ভেসে আসা নূড়ি পাথর কুড়িয়ে আনার মত।
পেট্রোল, গ্যাস, পাথর সহ প্রাকৃতিক সম্পদে ভরপুর সিলেটে সিমেন্ট ফ্যাক্টরি, পেপার এন্ড পাল্প মিল্স, সার কারখানা ও প্রাকৃতিক গ্যাস ক্ষেত্রের মতো বড় বড় শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে।
প্রায় পাঁচ হাজার বর্গমাইলের এক কোটি জনসংখ্যা অধ্যুষিত বাংলাদেশের প্রান্তিক জনপদ বৃহত্তর সিলেট জাতীয় জীবনের সকল ক্ষেত্রে সম্পদ, মেধা ও অবদানের নিরিখে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। সবার ওপরে রয়েছে বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে থাকা প্রবাসী চির অভিযাত্রী দুঃসাহসী মানব সম্পদ- যাদের বলা হয় বাংলাদেশের কলম্বাস।
ইউরোপ, আমেরিকা ও মধ্যপ্রাচ্যসহ বিশ্বের ১৪০টির বেশি দেশে ছড়িয়ে আছেন প্রায় ৭০ লাখ বাংলাদেশী। প্রতি বছর এই বিপুল সংখ্যক প্রবাসির একটা উল্লেখযোগ্য অংশ সিলেট ভ্রমণ করেন। এক্সেলসিয়র এই সব প্রবাসিদের আকৃষ্ট করতে সক্ষম হবে।
ইকোনমিক জোন ও স্টেডিয়াম:
বাংলাদেশ সরকার প্রবাসী এবং বিদেশিদের বিনিয়োগে আকৃষ্ট করার লক্ষ্যে সিলেটে স্পেশাল ইকোনমিক জোন প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নিয়েছে। এছাড়া সিলেট গল্ফ ক্লাবের সন্নিকটে একটি বিশ্বমানের স্টেডিয়াম প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। এই স্টেডিয়ামে টি-২০ বিশ্বকাপসহ জাতীয় ও আন্তর্জাতিক খেলাধুলা হচ্ছে। এর ফলে আরো বিপুল সংখ্যক মানুষের নিয়মিত আগমন ঘটছে সিলেটে। ফলে এখানে আন্তর্জাতিক মানের আবাসন সুবিধা এখন সময়ের দাবী।
সেভেন সিস্টার্স :
সিলেটের সন্নিকটে রয়েছে ভারতের সেভেন সিস্টার্স খ্যাত সাতটি গুরুত্বপূর্ণ প্রদেশ। এখান থেকে আসাম, ত্রিপুরা, মিজোরামসহ সেভেন সিস্টার্সের অন্যান্য স্থানে ভ্রমণ খুবই সহজ। নিকটবর্তী দর্শনীয় স্থানের মধ্যে রয়েছে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে আচ্ছাদিত গারো, খাসিয়া, জৈন্তা ও কাছাড় সহ প্রায় সাড়ে ছয় হাজার ফুট উচু শিলং পাহাড়। ইতোমধ্যে এই সব এলাকা পর্যটনের অন্যতম আকর্ষণীয় ক্ষেত্র হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। এ অঞ্চলে আন্তর্জাতিক মানের কোন হোটেল না থাকায় এক্সেলসিয়র এই চাহিদা পুরণে সক্ষম হবে।
এশিয়ান হাইওয়ে:
ইউরোপ থেকে এশিয়া বিস্তৃত সড়ক পথ এশিয়ান হাইওয়ে ভারত হয়ে সিলেটে মিশেছে। এটিই মায়ানমার, চায়না সহ বিভিন্ন দেশের সাথে সংযুক্ত হয়েছে। এতে সাউথ এশিয়ান ইকোনমিক হাব হিসেবে সিলেটের বিস্তৃতি ঘটবে বিশ্বময়। বিদেশী পর্যটক ও ব্যবসায়িদের যাতায়াত বেড়ে যাবে। সিলেট ভ্রমণকারীদের নিরাপদ ও স্বাচ্ছন্দময় পরিবেশে খাবার ও অবস্থান নিশ্চিত করবে এক্সেলসিয়র।
এক্সেলসিয়র সিলেটের ম্যানেজিং ডাইরেক্টর সাঈদ চৌধুরী এই প্রকল্পের নান্দনিক পরিবেশ সহ বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা ও ভবিষ্যত পরীকল্পনা তুলে ধরে বলেন, হযরত শাহপরান (র:) এর মাজারের নিকটবর্তী সিলেটের খাদিম পাড়ায় প্রতিষ্ঠিত হলিডে রিসোর্ট ও ইকো-পার্ক জাকারিয়া সিটি কিনে নিয়েছে এক্সেলসিয়র গ্রুপ। ১৯ মে ২০১৪ থেকে এক্সেলসিয়র সিলেটের বাণিজ্যিক কার্যক্রম চালু হয়েছে। ১৭ একর জায়গা জুড়ে ৫০ হাজার বৃক্ষরাজি শোভিত এক্সেলসিয়র সিলেটে রয়েছে ক্যামেলিয়া ও মধুমালতি নামে দুটি হোটেল ভবন, দুটি রেষ্টুরেন্ট, রিসেপশন ও প্রশাসনিক ভবন, ব্যাঙ্কুইটিং হল ও অডিটরিয়াম, কন্ফারেন্স হল, এক্সিকিউটিভ হল, ফিটনেস জিম, সুইমিংপুল, স্পোর্স সেন্টার ও মসজিদ। ৭টি হরিণসহ বহু জাতের পাখির কলকাকলিতে মুখরিত ছায়াঘেরা এই হোটেল এন্ড রিসোর্ট সত্যিই চিত্তাকর্ষক। পরিবার-পরিজন নিয়ে নিরাপদ আবাসন ও বিনোদনের আকর্ষণীয় স্থান এক্সেলসিয়র সিলেট। বিয়ে, জন্মদিন ও বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠানের নান্দনিক ভেন্যু এক্সেলসিয়র অডিটরিয়াম এন্ড ব্যাঙ্কুইটিং হল। সম্মেলন আর পণ্য প্রদর্শনীর আয়োজনে ব্যাংক-বিমা সহ কর্পোরেট হাউজের পছন্দ এক্সেলসিয়র কন্ফারেন্স হল। এক্সেলসিয়র হিলভিউ রেস্টুরেন্টে রয়েছে মেন্যু বৈচিত্রে ভরপুর অভিজাত ফিউশন ফুড, বাংলাদেশী ও থাইসহ এশিয়ার বিভিন্ন অঞ্চলের মজাদার খাবার। আছে প্রাইভেট বুকিং সুবিধা এবং পারিবারিক ও প্রাতিষ্ঠানিক ভোজসভায় মিলিত হবার অনন্য সুযোগ। এক্সেলসিয়রে রয়েছে ওয়াটার ওয়েবে’র মনোরম দৃশ্য, নিরাপদ পরিবেশে খেলাধুলা ও শরীর চর্চা, বৃহদাকার সুইমিং পুলে সাতরানো, আঁকাবাঁকা লেকে নৌকা চড়া ও মাছ শিকারের অনুপম সুযোগ।
ম্যানেজিং ডাইরেক্টর আরো জানান, বর্তমানে ত্রি স্টার এই হোটেল ফাইভ স্টারে পরণিত করা হবে। এজন্য বিশিষ্ট স্থপতি লন্ডন অলিম্পিকের স্মারক মুদ্রার নকশাকার সাইমন মিয়া ও ইঞ্জিনিয়ার কামরুল ইসলাম হিরা ও ইঞ্জিনিয়ার ইমরান এক্সেলসিয়রের নতুন ভবন সমূহের ডিজাইন করছেন। তবে ইতোমধ্যেই পরিবার পরিজন নিয়ে নিরাপদ আবাসন ও বিনোদনের আকর্ষনীয় স্থান হিসেবে এক্সেলসিয়রের বিস্তৃতি লক্ষ্যণীয়। ব্যাপক সকর্মসংস্থান সৃষ্টি সহ পর্যটন শিল্পের বিকাশে নতুন মাত্রা সৃষ্টি করবে এক্সেলসিয়র সিলেট ।
উত্তর সমূহ